ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার অভিযোগ প্রমাণ করতে বলল মস্কো

ইউক্রেনের রুশপন্থী বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকেই ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে মালয়েশীয় উড়োজাহাজটি ভূপাতিত করা হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র যে অভিযোগ করেছে, তা প্রমাণ করতে বলেছে রাশিয়া। এ প্রেক্ষাপটে ইউক্রেন-সংকটে রাশিয়ার ভূমিকা থাকার অভিযোগ এনে মস্কোর বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনে রাশিয়ার ভূমিকা থাকার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় ইইউসহ পাশ্চাত্যে সম্প্রতি রুশবিরোধী মনোভাব জোরালো হয়েছে। এদিকে প্রথম দফায় নিহত আরোহীদের ৪০ জনের মরদেহ পাঠানোর পর গতকাল বৃহস্পতিবার আরও ৭৪টি লাশ দুটি বিমানে করে ইউক্রেন থেকে নেদারল্যান্ডসে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের দেহাবশেষ আজ শুক্রবার নেদারল্যান্ডসে পৌঁছার কথা। খবর বিবিসি ও এএফপির। রুশ উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী আনাতোলি আন্তোনভ গতকাল বৃহস্পতিবার রাশিয়া-২৪ টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, তাঁদের কাছে এ রকম কারিগরি তথ্য ও স্যাটেলাইট চিত্র রয়েছে যে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে উড়োজাহাজটি ভূপাতিত করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ তথ্য কোথায়?’ মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য এসএ-১১ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ২৯৮ আরোহী বহনকারী মালয়েশীয় উড়োজাহাজটি ভূপাতিত করা হয়েছে। তাঁদের দাবি, রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চল থেকেই ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোড়া হয়েছে।
ওয়াশিংটনের অভিযোগ, ইউক্রেনের রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে মস্কো। তবে মস্কো বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, তাঁদের বিশ্বাস, আমস্টারডাম থেকে কুয়ালালামপুরগামী উড়োজাহাজটি ভুল করে ভূপাতিত করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। তারা মনে করেছিল, এটি ইউক্রেন সরকারের উড়োজাহাজ। নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি: ২৮-জাতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গতকাল বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে মিলিত হয়েছেন। সেখানে তাঁরা চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে এমন রুশ নাগরিকদের একটি নতুন তালিকা উত্থাপন করবেন। কয়েকটি রুশ প্রতিষ্ঠানও নিষেধাজ্ঞার বিবেচনায় রয়েছে। ইইউ এক বিবৃতিতে বলেছে, রাশিয়া তার অবস্থান না পাল্টালে এবং ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধবিমান ও অস্ত্রসরঞ্জাম পাঠানো বন্ধ না করলে তারা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে প্রস্তুত। এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে তাদের মোটেও বিলম্ব হবে না। ইইউর অভিযোগ, ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়া অঞ্চলকে আলাদা করার ‘ষড়যন্ত্র’ এবং ইউক্রেনকে অস্থিতিশীল করার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছে রাশিয়া। ব্ল্যাক বক্সের তথ্য বিশ্লেষণ: যুক্তরাজ্যের তদন্ত দল বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের দ্বিতীয় ব্ল্যাক বক্সের তথ্য বিশ্লেষণ শুরু করেছে। দেশটির এয়ার অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্রাঞ্চ (এএআইবি) ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর) থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। এখন ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (এফডিআর) বিশ্লেষণ করা হবে। এফডিআরে কারিগরি তথ্য সংগৃহীত থাকে। এর আগে গত বুধবার প্রথম ব্ল্যাক বক্সটি থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। উড়োজাহাজের নিহত আরোহীদের মধ্যে ১০ জন যুক্তরাজ্যের নাগরিক। ব্ল্যাক বক্সের তথ্য বিশ্লেষণে নেতৃত্ব দিচ্ছে ডাচ্ সেফটি বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, সিভিআর থেকে ইতিমধ্যে ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য’ সংগ্রহ করা হয়েছে।
এখন তা আরও বিশ্লেষণ ও তদন্ত করা হবে। ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ: নেদারল্যান্ডসের পুলিশ কর্মকর্তারা নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্ত করতে দেহাবশেষ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছেন। তাঁরা মরদেহগুলো থেকে চিরুনি ও আঙুলের ছাপের মতো নমুনা এবং চিকিৎসাসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যও সংগ্রহ করছেন। অনেক লাশই খণ্ডবিখণ্ড অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়া সেগুলো কয়েক দিন খোলা জায়গায় পড়ে ছিল। এ জন্য পরিচয় শনাক্তের কাজে সময় লাগবে। ১৭ জুলাই নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম শহর থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে যাওয়ার সময় উড়োজাহাজটি ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলের আকাশে বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৫ জন ক্রুসহ উড়োজাহাজটির মোট ২৯৮ জন আরোহীই মারা যান। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৯৩ জনই নেদারল্যান্ডসের নাগরিক। মালয়েশিয়ার নাগরিক ৪৩ জন। বাকিরা অন্য ১০টি দেশের। ইউক্রেনে আবার লড়াই: এদিকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে মালয়েশীয় উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার স্থানের কাছে আবার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তুমুল লড়াই শুরু হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এ লড়াইয়ে হতাহতের তথ্য পাওয়া না গেলেও দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলাবিনিময়ের খবর পাওয়া গেছে। মালয়েশীয় যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর ইউক্রেনের সরকারি বাহিনী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলেছে, ‘রাশিয়ার দিক থেকে’ রকেট হামলা চালানো হয়েছে। এসব রকেট লুগানস্ক বিমানবন্দরের আশপাশের এলাকা ও দোনেৎস্ক অঞ্চলে আঘাত হেনেছে। তা ছাড়া দোনেৎস্কের আভদিকা এলাকায়ও গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু জানায়নি সেনাবাহিনী। এএফপির একজন ক্রু সহিংসতাকবলিত এলাকায় প্রবেশ করতে চেয়েও পারেননি। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে গোলা নিক্ষেপ করলে তিনি ফেরত আসেন।

No comments

Powered by Blogger.