যৌনদাসীর কথায় কাঁদলেন অ্যানজেলিনা জোলি

কাঁদলেন বিশ্বের সেরা আবেদনময়ী অভিনেত্রী অ্যানজেলিনা জোলি। সুদানের শিশু যৌনদাসীদের কথা শুনে কাঁদলেন তিনি। বুধবার সাবেক এক শিশু যৌনদাসী বলছিলেন, কিভাবে তাকে উগান্ডা থেকে অপহরণ করে অন্য আরও শিশুদের সঙ্গে শত মাইল দূরের সুদানে পাঠানো হয়েছিল। নগ্ন অবস্থায় পালিয়ে আসার পূর্ব পর্যন্ত তাকে বহুবার ধর্ষণ করা হয়েছে। তার নাম ইসথার রুথ আতিম। সংঘর্ষ ও সংঘাতপূর্ণ এলাকায় যৌন নির্যাতনবিষয়ক একটি বৈশ্বিক সম্মেলনে এসব বলছিলেন তিনি। ২০০৩ সালে মাত্র ৯ বছর বয়সে পূর্ব উগান্ডার কাবেরামাইদো জেলার একটি গ্রাম থেকে তাকে অপহরণ করে প্রায় ৩ বছর ধরে তার ওপর নৃশংসভাবে যৌন নির্যাতন চালায় কুখ্যাত লর্ডস রেসিসটেন্স আর্মি (এলআরএ) নামক উগান্ডার একটি সশস্ত্র বিদ্রোহী দলের সদস্যরা। এলআরএ প্রায় দুই যুগ ধরে উত্তর উগান্ডায় গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল। হলিউড অভিনেত্রী অ্যানজেলিনা জোলি ও বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগের সামনে ইসথার রুথ বলেন, তিনি সুদানে এলআরএ বিদ্রোহীদের দ্বারা কতবার ধর্ষিত হয়েছেন, তা তিনি নিজেও জানেন না। তিনি আরও বলেন, ধর্ষণ ছিল প্রতিদিনকার চিত্র। ধর্ষণের পর আমি সাধারণ মানুষের মতো নাড়াচাড়াও করতে পারতাম না। খুব করুণভাবে হাঁটতে হতো, মনে হতো যেন কোন ব্যাঙ লাফিয়ে চলছে। তাদের সঙ্গে সব সময় দাসীর মতো আচরণ করতো বিদ্রোহীরা। তাদের কোমরে শক্তভাবে রশি বেঁধে রাখা হতো। এলআরএ সদস্যরা তাদের সাবধান করে দিয়েছিল, যদি তারা পালাতে চেষ্টা করে, তাহলে মেরে ফেলা হবে। সকল শিশু যৌনদাসীর সামনেই পালানোর চেষ্টাকালে ধরা পড়া একজনকে নিষ্ঠুরভাবে জবাই করে হত্যা করা হয়। তবুও অনেক শিশুই রাতের অন্ধকারে পালানোর চেষ্টা করতো। পালাতে গিয়ে বহু শিশুই বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছিল। বন্দি অবস্থায় তাদের পোশাক অশ্রুতে ভেজা থাকতো। তিনি অশ্রুবিগলিত কণ্ঠে বলেন, অনেক সময় আমাদেরকে খুব ঠা-া বা বৃষ্টি বা রোদের মধ্যে ঝোপঝাড়ের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হতো। কোন খাবার এমনকি পানিও দেয়া হতো না। যদি তৃষ্ণা লাগে, তাহলে সঙ্গের আরেক শিশুকে প্রশ্রাব করতে বলা হতো, তারপর সেসব খেয়েই তৃষ্ণা নিবারণ করতে হতো। সবাই ছিল খুব তৃষ্ণার্ত। কেউ যদি প্রশ্রাব করতে না পারতো, তাহলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হতো। ইসথারের কাজ ছিল রান্না করা, কিন্তু নিজে সেই রান্না খেতে পারতো না। বাধ্য হয়ে গাছের পাতা খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করতে হতো। সকল বয়সের সৈনিক এসে ধর্ষণ করতো। যদি কোন শিশু এতে অস্বীকৃতি জানাতো, তাহলেই মৃত্যু। ৩ বছর পর ১২ বছর বয়সে তিনি পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। কিন্তু তখন তিনি নতুন মানসিক সমস্যায় পড়েন। তখন তাকে কাউন্সেলিং করতে হয়েছিল। তখন সব সময় দুঃস্বপ্নের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। এদিকে ঘরে ফিরে আসার পর তিনি উপলব্ধি করলেন সবকিছু আগের মতো নেই। বন্দিকালীন তার ভাইকে খুন করেছে এলআরএ, তার বাবার ওপর অত্যাচার চালিয়ে, তার মাকে করেছে গণধর্ষণ। তিনি অতঃপর স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু যৌনদাসত্বের শিকার হওয়া অন্যান্য শিশুর মতো, তাকেও পেতে হয়েছিল কলঙ্কিনী ও অলক্ষুণে অপবাদ। তিনি জানান, যেসব মেয়ে এলআরএ কর্তৃক অপহৃত হয়েছে, তারা নিজ ঘরে ফিরলে, নিজের সমপ্রদায়ের মধ্যে এখনও কলঙ্কিত মেয়ে হিসেবে পরিগণিত হয়। এছাড়া, অপহরণকালীন সময়ে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ায়, জীবনযুদ্ধে তাদের নিরন্তর সংগ্রাম কখনই শেষ হয় না। তিনি এই ধরনের ধর্ষিতাদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, আর্থিক সাহায্য ও এলআরএ বিদ্রোহীদের থেকে সুরক্ষা এবং অপহৃত শিশুদের এলআরএ’ হাত থেকে মুক্ত করার জন্য উগান্ডার সরকারের কাছে আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, উগান্ডার সরকারের সঙ্গে যুদ্ধবাজ নেতা জোসেফ কনির নেতৃত্বাধীন এলআরএ’র সংঘাতের সময়ে বহু শিশু অপহৃত হয়। এদের অনেকে যোদ্ধা, কুলি, রান্না ও যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এসব সংঘাত উগান্ডার প্রতিবেশী দেশসমূহেও বিস্তৃত হয়। বর্তমানে ইথার একটি সংগঠন দাঁড় করিয়েছেন, যেটি এই ধরনের সাবেক শিশু যৌনদাসীদের জন্য কাজ করে। তিনি এদের সাহায্যের জন্য উগান্ডা সরকারের কাছে আবেদন জানান। এলআরএ প্রধান জোসেফ কনি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত। বর্তমানে সে মধ্য আফ্রিকার জঙ্গলে পালিয়ে আছে বলে ধারণা করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.