থাইল্যান্ডে ক্ষমতায় সেনাবাহিনী

সেনাপ্রধান ক্ষমতা গ্রহণের ঘোষণা দেওয়ার পর গতকাল
রাজধানী ব্যাংককের রাস্তায় সেনাসদস্যরা অবস্থান নেন।
থাইল্যান্ডে সরকার ও বিরোধী দলের কোন্দল-হানাহানির সুযোগে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে সেনাবাহিনী৷ দেশটির সেনাপ্রধান গতকাল বৃহস্পতিবার দেশবাসীর উদ্দেশে এক টেলিভিশন ভাষণে আনুষ্ঠানিকভাবে সেনা-অভ্যুত্থানের ঘোষণা দিয়ে বলেন, সেনাবাহিনী সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে৷ এরপর দেশজুড়ে কারফিউ জারির ঘোষণা দেওয়া হয়৷ খবর বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্সেরথাইল্যান্ডে কয়েক মাস ধরে চলা রাজনৈতিক সংকটের পর শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার অজুহাত দেখিয়ে গত মঙ্গলবার সামরিক আইন জারি করে সেনাবাহিনী৷ তবে মধ্যরাতে জারি করা ওই পদক্ষেপ সম্পর্কে অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ কিছু জানতেন না৷ ফলে এ নিয়ে তখন থেকে আলোচনা শুরু হয়, সেনাবাহিনী অভ্যুত্থান করেছে কি না৷ তবে সেনাপ্রধান তখন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এটি কোনো ‘সেনা-অভ্যুত্থান’ নয়৷অবৈধভাবে ক্ষমতা গ্রহণের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে গতকাল ভাষণে সেনাপ্রধান প্রাইউথ শান-ওশা বলেন, দেশে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনতে সেনাবাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, রাজকীয় বিমানবাহিনী ও পুলিশের সমন্বয়ে জাতীয় শান্তিরক্ষা কমিটি ২২ মে (বুধবার) বিকেল সাড়ে চারটা থেকে ক্ষমতা নিচ্ছে৷ প্রাইউথ যখন ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখন তাঁর দুই পাশে সামরিক বাহিনীর চার শীর্ষ কর্মকর্তাকে বসে থাকতে দেখা যায়৷ প্রাইউথ বলেন, সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে সেনাবাহিনী৷
তারা শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করবে এবং রাজনৈতিক সংস্কারের পথে অগ্রসর হবে৷ সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেন, সেনাপ্রধান প্রাইউথ থাইল্যান্ডকে আরেকটি ‘ইউক্রেন বা মিসরে’ পরিণত হতে না দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন৷ আলোচনার টেবিলে বসে সমঝোতায় পেঁৗছানোর মধ্য দিয়ে সংকটের সমাধান বের করতে তিনি রাজনীতিবিদদের সুযোগ দিয়েছেন৷ কারফিউ: অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে৷ সেনাপ্রধান স্থানীয় সময় গতকাল রাত ১০ টা থেকে আজ শুক্রবার ভোর ৫টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করেন৷ এই সময় কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ আর টেলিভিশনের স্বাভাবিক অনুষ্ঠানও বাতিল করা হয়েছে৷ নেতাদের বৈঠকস্থল সিলগালা: সামরিক আইন জারির পর সংকট উত্তরণের চেষ্টায় সেনাবাহিনীর উদ্যোগে রাজধানী ব্যাংককে গত বুধবার আলোচনায় বসেন বিবদমান পক্ষগুলোর নেতারা৷ গতকাল টানা দ্বিতীয় দিনের মতো তাঁরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন৷ এমন সময় দেশে সেনা-অভ্যুত্থানের ঘোষণা আসে৷ এর পরই বৈঠকস্থল থেকে নেতাদের সরিয়ে নিয়ে সেটি সিলগালা করে দেয় সেনাবাহিনী৷ ইংলাক সিনাওয়াত্রার বিরোধী শিবির ও গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য পক্ষের নেতারা গতকাল স্থানীয় সময় বেলা দুইটার দিকে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থায় ব্যাংককে সেনাবাহিনীর একটি ক্লাবে আলোচনায় জড়ো হয়েছিলেন৷ বৈঠকের আগে জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলে সেনাব​াহিনীর তরফে এক লিখিত বার্তা পড়ে শোনানো হয়৷ এতে বলা হয়, আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে (সেনাবাহিনী) ওই সব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বেলা দুইটায় (বুধবার) একই স্থানে বসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছে৷ সংকটের শুরু: থাইল্যান্ডের সাম্প্রতিক অস্থিরতার শুরু গত বছরের শেষ দিকে৷ সে সময় নানা সংকটের আবর্তে পড়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ভেঙে ​দেন৷ গত ফেব্রু​য়ারিতে বিরোধী দলের আপত্তির মুখে তিনি পার্লামেন্ট নির্বাচন করেন৷ এরপর বিক্ষোভকারীরা বেশকিছু স্থান আটকে বিক্ষোভ চালিয়ে যান৷ চলতি মাসের শুরুতে ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে আদালত ইংলাককে ক্ষমতা ছাড়ার নির্দেশ দেন৷ আদালতের নির্দেশে ইংলাকের বিদায়ের পর চলমান অস্থিরতা মারাত্মক আকার ধারণ করে৷ দেখা দেয় ক্ষমতার শূন্যতা৷ ইংলাক-সমর্থিত একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বর্তমানে ক্ষমতায় থাকলেও তা কার্যকর ছিল না৷

No comments

Powered by Blogger.