যৌন হয়রানির বা ধর্ষনের ফলে সৃষ্ট সমস্য সমুহ কি রকম হতে পারে @সরেজমিন বার্তা

ধর্ষন হলো এমনপ্রকার যৌন লাঞ্ছনা যার সাথে শাররীক সম্পর্ক জড়িত, যা এক বা একাধিক ব্যক্তির অপর পক্ষের সম্মতি ব্যতিরিকে শাররীক সম্পর্ক স্থাপনের ক্রিয়া। এটি বড়ধরনের একটি অপরাধ। এই কাজে বেশিরভাগ সময় শারীরিক শক্তি, বাধ্যতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদি নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।

আন্তঃর্জাতিক ভাবে সর্বনিন্ম মিশরে প্রতি ১ লক্ষ নারীর মাঝে ০.১% এবং সর্বচ্চো আফ্রিকার একটি দেশ লিছুটু (Lesotho) তে প্রতি ১ লক্ষ নারীর ৯১.৬% নারী ধর্ষনের শিকার হন।

বিশ্বজুড়ে ধর্ষনের করাল থাবায় নারীর সংখ্যা বেশি হলেও ধর্ষীত হবার হারে পুরুষ ধর্ষিত হবার ঘটনা ৯%। এবং ধর্ষনকারীর ৯৯% পুরুষ।

যৌন হয়রানির চরম ক্ষতিকর প্রভাব এবং এর ফলশ্রুতিতে অন্যন্য সমস্যা হয়রানির শিকার হওয়া নারীর সাথে সাথে পরিবার এবং সমাজেও বিরুপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। নিন্মে তার কিছু উল্ল্যেখযোগ্য দিক তুলে ধরা হলো।
শাররীক ক্ষতিঃ
• যে সকল নারী একইসাথে যৌন এবং শাররীক অত্যাচারের শিকার হন তাদের মধ্যে যৌনবাহিত রোগ সংক্রমনের সম্ভাবনা বেশি দেখা দেয়।
• বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর প্রায় বত্রিশ (৩২,০০০) হাজারের বেশি নারী ধর্ষণের ফলে অন্তঃসত্বা হয়ে পড়েন।
• যৌন হয়রানির কিছু দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার মধ্যে আছে -
- দীর্ঘস্থায়ী পিলভিক পেশীর ব্যথা।
- মাসিকের অব্যবহিত পূর্ববর্তী মানসিক এবং শাররীক সমস্যা (Premenstrual syndrome - PMS)।
- গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগ
- গর্ভধারনে সমস্যা হওয়া।
- মাইগ্রেইন এবং অন্যান্য প্রকৃতির মাথাব্যথা।
- মেরুদন্ডে ব্যথা।
- রোগপ্রতিরেধের অক্ষমতা।
মনস্তত্ত্বিক ক্ষতিঃ
যৌন হয়রানির শিকার হওয়া নারী ঘটনা পরবর্তী এবং দীর্ঘস্থায়ী মনস্তত্ত্বিক সমস্যায় পতিত হতে পারে।
ঘটনা পরবর্তী সমস্যর মধ্যে আছে -
• বার বার গোসল করতে থাকা
• নিজকে অপবিত্র মনে হতে থাকা
• নিজকে অপরাধী মনে করা
• মানসিক আঘাত
• ঘটনা অস্বিকার করার প্রবনতা
• ভয়
• যেকোন বিষয়ে সন্দিহান
• উদ্বেগ
• যৌন ক্ষুধাহীনতা
• অল্পতেই ঘাবড়ে যাওয়া
• অন্যের প্রতি অবিশ্বাস জন্মানো
• ঘটনা পরবতী মানসিক চাপ, যেমন -
- মানসিক বিচ্ছিন্নতা
- ঘুমের সমস্য
- বার বার হামলার ঘটনা মনে আসা এবং চমকে যাওয়া
দীর্ঘস্থায়ী মনস্তত্ত্বিক সমস্যা গুলোর মধ্যে আছে-
• বিষণ্নতা
• আত্মহত্যার চেষ্টা করা কিংবা আত্মহত্যা করা
• উন্মত্ততা
• ঘটনা পরবর্তী কঠিন দুশ্চিন্তার লক্ষন প্রকাশ
• অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহনের আচরণ
• খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেওয়া
• বমি করা
• যেকোন ঔষুধের অপব্যবহার করা
• অতিরিক্ত খেতে থাকা
সামাজিক সমস্যাঃ
যৌন হয়রানির / ধর্ষণে সামাজিক ভাবেও নারী নানাবিদ সমস্যায় পতিত হয়, যেমন -
• ভুক্তভুগি এবং তার বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে আন্তরিকতাশূন্য সম্পর্ক সৃষ্টি হয়।
• ভুক্তভুগি নিজ পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের কাছে থেকে কোন প্রকার মানসিক সহায়তা তথা শান্তনা পায়না।
• বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়স্বজন যোগাযোগ করতে অনীহা পোষণ করে।
• বিবাহের জন্য প্রস্তাব আসেনা এমনকি যারা বিবাহিত তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ভেঙে যাবারও সম্ভাবনা প্রকট হয়।
ধর্ষীতার অন্যন্য অভ্যাসের পরিবর্তনঃ
কিছু গবেষণায় যৌনহয়রনির শিকার নারীর মাঝে নিম্নবর্নিত শাররীক অভ্যাসের পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। এসকল অভ্যাসের ফলে বেশিরভাগ সময় একই নারী পুনরায় ধর্ষণের কবলে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
ধর্ষিতা নারীর উচ্চ ঝুকির যৌন অভ্যাসের মধ্যে আছে -
• শাররীক মিলনে নিরোধক (কনডম কিংবা খাবার বড়ি) ব্যবহার না করার প্রবনতা
• তাড়াতাড়ি যৌনকার্য সমাধানের প্রবৃত্তি
• শাররীক ভাবে অসুস্থ্য পুরুষের সাথে মিলন করতেও অস্বস্তি না বোধ করা
• অনেক পুরুষের সাথে শাররীক সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রবনতা
• পতিতাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়া
• শরীরের জন্য ক্ষতিকর বস্তুর ব্যবহার শুরু করা, যেমন-
- ধুমপানে আসক্তি
- মদ্যপান করা
- মাদক সেবন শুরু করা
- গাড়ী চালানোর সময়ও মাতাল থাকা
পরিশিষ্টঃ
ধর্ষন বলেন কিংবা ছোটখাট ইভটিজিং এর কথাই বলেন; একজন নারীর জন্য তা কল্পনাতীত ভাবে অস্বস্তিকর। আপনি হয়তো সামান্য ২/১ টা বাজে কথা বলে আনন্দ গ্রহন করার চেষ্টা করছেন - কিন্তু আন্দাজ করতে পারেন যে মেয়েটিকে টিজ করছেন তার মনে কি পরিমান ঘৃনা/ভয় তোলপাড় করছে? ধর্ষনের বিরূদ্ধে বলার মত ভাষাগত শক্তি আমার এখনো হয়নি (কারন যে মানুষ ধর্ষনের মত ঘৃন্য কাজ করতে পারে - সে প্রকাশ্যে মানুষ খুন করতে বিন্দুমাত্র হাত কাঁপবে না।)

পুরুষ ভাইদের কাছে হাতজোড় করে একটি অনুরোধ। অন্যকে উত্তোক্ত করে আপনি ক্ষনিকের জন্য মজা পাবেন। আপনার সামান্য মজার বিপরীতে বোনটির কি অবস্থা হচ্ছে তা কি একটু ভাববেন? নারীকে সম্মান করার মানেই হলো মায়ের জাতকে সম্মান করা। মায়ের জাতকে সম্মান করা মানে হলো আপনার জন্মকে সম্মান দেখানো।

No comments

Powered by Blogger.