মনে হয় মেয়ে ঘরে আসতেছে

আমি তার কবরও পাইলাম না
যেদিন রানা প্লাজায় যাবে, তার আগের দিন দেখি মেয়ে বিকেলবেলায় বইসা আছে। বলে, ‘আম্মু আমার ভালো লাগে না।’ আমি বলছি কী, ভালো লাগে না, তাহলে তুমি যাইয়ো না। ‘ভালো লাগে না, যামু না, তাহলে বেতন আটকাই দিব।’ তাইলে তুমি জানের ঝুঁকি নিয়া যাইবা! যদি একটা দুর্ঘটনা ঘটে, আমি কী করব। তোমার বাবাও নাই। আমি মহিলা মানুষ, কী করব। সে বলে কী, ‘তুমি পাগল। তুমি চিন্তা করো ক্যান। আমি কি রানা প্লাজায় একলা চাকরি করি? হাজার হাজার মানুষ চাকরি করে। সবার মরণ হলে আমারও হবে।’ ২৪ তারিখ সকালে উইঠা গোসল করল। জামাকাপড় পরল। আমি ভাত বাইড়া দিছি। সে ভাত খাইল। খেয়ে বলে কী, ‘আম্মু, আমি যাই। তুমি চিন্তা করবা না। আজকে আমাদের পুরো ফ্লোর খোলা আছে। পুরা ডিউটি করব। তুমি ভাত দিয়া দাও।’ বাটিতে ভাত বাইড়া দিলাম। ভাজি রান্না করছিলাম। স্টিলের বাটিতে ভাত দিয়া দিলাম। আগের রাতে সে ঘুমায় না। আমি শুইয়া পড়ছি, ওরা দুই ভাইবোন অনেকক্ষণ কথা বলছে। টিভি দেখছে। শান্তা বলছে, ‘ভাই, তুই ভালো কইরা পড়াশোনা করবি। আম্মুর মনের আশা পূরণ করবি। সুন্দর কইরা পড়ালেখা কইরা মানুষের মতো মানুষ হবি।’ ওর ভাই বলে কী, ‘শান্তা আপু, তুমি এমন কইরা কথা বলতেছ ক্যান?’
মেয়ে কয়, ‘তোরে সুন্দর কইরা ভালো হয়া থাকতে বলতেছি। তুই আম্মুর কথা শোনছ না। দুষ্টুমি করিস।’ মেয়েটার খুবই আশা ছিল যে আমার এই ছেলেটারে মানুষের মতো মানুষ করব। যখন ওরে স্কুলে ভর্তি করায়া দেয়, তখন কয়, ‘ভাই, তোরে আমি ভালো স্কুলে ভর্তি করায়া দিমু। আমাগো বাবা নাই তো কী হইছে। আমি পড়ালেখা করতে পারিনি, কিন্তু তোরে পড়ালেখা আমি করামু, আমার যত কষ্ট হয়।’ বাইরে থাইক্যা একটা সেন্টার ফ্রুট আনলেও ওরে কইত, ‘ভাই, সেন্টার ফ্রুট আনছি, খাবি? আমার ব্যাগে আছে, নে।’ ওভারটাইম পাইলে ওর জন্য টাকা রাখত। ওর জন্য নাশতা আনত। আমার কিছু হইলে—আমার এই মেয়েটায় মনে করেন বাসায় ঢুকার সাথে সাথে যদি আমারে না দেখত, তাইলে ছেলেরে জিজ্ঞাসা করত, ‘কইরে স্বপন, আম্মু কই।’ যদি কইত, আম্মু রান্না করে, তাইলে শান্ত হইত। যদি শুনত আম্মু অসুস্থ বা আম্মুর জ্বর আইছে, ও যে কী করব, দিশা পাইত না। মেয়েটা নিজের জানের ঝুঁকি নিয়া কাজকাম করছে। আমারে কষ্ট বুঝতে দেয় নাই। আমার হার্টের সমস্যা, আমি একবার স্ট্রোক করছিলাম দেইখা মেয়ে আমারে কাজ করতে দেয় না। আমিও পাঁচ বছর গার্মেন্টসে কাজ করছি। আমি বুঝি, গার্মেন্টসে চাকরি করলে কত কষ্ট। দিনেরে রাত, রাতেরে দিন কইরা চাকরি করছি। এক মিনিট লেট হইলে হাজিরা কাইট্যা দেয়। তিন দিন লেট হইলে এক দিন অ্যাবসেন্ট

No comments

Powered by Blogger.