নেপালের ‘কামলারি’ ক্রীতদাসীরা

মনিজা চৌধুরী
নয় বছরের মেয়েশিশু মনিজা চৌধুরী। বাবা-মা ছাড়া কখনো একটি রাত কাটানোর চিন্তাও করেনি সে। তবে বাবা তাকে মাত্র ২৫ মার্কিন ডলারে একজন নেপালি পুলিশ সদস্যের কাছে বিক্রি করে দিলে পরিবারের সঙ্গে থাকা তার কাছে কেবলই স্বপ্ন হয়ে যায়। মনিজাকে বিক্রির পর ওই পুলিশ সদস্য প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যান।
মনিবের বাড়িতে নতুন জীবনে মনিজার দিন শুরু হয় ভোর চারটায়। প্রতিদিন ওই সময়ে উঠে প্রথমে বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হয়; এরপর রান্নাবাড়া। মনিবের বাড়ির পাশাপাশি তার স্বজনদের বাড়িতেও একই কাজ করতে হতো। সারা দিন অক্লান্ত পরিশ্রম শেষে মধ্যরাতের কিছুটা আগে যখন আবার মনিবের বাড়িতে ফেরা হয়, তখন দুচোখ ঘুমে একেবারে বন্ধ হয়ে আসে। প্রতিদিন একই রুটিনে চলা। মনিজা (২২) বলেন, ‘আমি এত কাজ সামলাতে পারতাম না। তাই আমার মনিবের স্ত্রী আমাকে নির্যাতন করতেন। কখনো কখনো অন্য কারও কাছে বিক্রি করে দেওয়ার হুমকি দিতেন।’ নেপালে এই প্রথাকে বলা হয় ‘কামলারি’। মাত্র ছয় বছর বয়সী মেয়েশিশুদের এভাবে দরিদ্র্য বাবা-মা চুক্তির মাধ্যমে গৃহদাস হিসেবে বিক্রি করেন। তারা মনিবের বাসায় কার্যত বন্দী জীবনযাপন করে।
মারধরের পাশাপাশি শিকার হয় যৌন সহিংসতার। ২০০৬ সালে ‘কামলারি’ প্রথা নিষিদ্ধ হলেও নেপালের বিভিন্ন এলাকায় তা আজও বহাল আছে। বিশেষ করে থারু সম্প্রদায়ের সদস্যরা অর্থের বিনিময়ে তাঁদের মেয়েশিশুদের বিক্রি করে দেন। মনিজার পরিবারও থারু সম্প্রদায়ের। বেশ কয়েক বছর আগে নেপাল ইয়ুথ ফাউন্ডেশন নামের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি সংগঠন মনিজার বাবার কাছে গিয়ে প্রস্তাব দেয়, মনিজাকে ফিরিয়ে আনতে রাজি হলে সহায়তা দেওয়া হবে এবং শিক্ষার ব্যবস্থা নেবে। ১২ বছর বয়সে মনিজা লেখতে-পড়তে শেখেন। বর্তমানে তিনি বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক শেষ করা আত্মবিশ্বাসী এক তরুণী। তবে শৈশবের সেই ভয়ার্ত স্মৃতি আজও তাঁকে তাড়িয়ে বেড়ায়। তাই নিজে এখন কামলারি অধিকার নিয়ে কাজ করেন মনিজা। তিনি বলেন, ‘আমার শৈশব চুরি হয়ে গেছে। আমি এই প্রথা মুছে ফেলতে কাজ করব।’ এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.