কৃষকের হাতে সরাসরি ভর্তুকি -কৃষির জন্য এক বিরাট সুসংবাদ

প্রতিবছর সরকার কৃষিতে বড় অঙ্কের ভর্তুকি দেয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায় একশ্রেণীর মধ্যস্বত্বভোগী সেই টাকার একটি বড় অংশ নানা কৌশলে নিয়ে যায়; কৃষক পায় তার নগণ্য অংশ। গত বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কৃষি-সেচের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহূত ডিজেলের জন্য যে ২৫০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছিল, এর পুরোটা কৃষক পায়নি। গবেষণা-প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সেখানে ৫০ কোটি টাকার অপচয় হয়েছে আর সেচযন্ত্রের মালিকদের পকেটে তো বেশ কিছুটা গেছেই। এ ধরনের বঞ্চনা থেকে রক্ষার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষকদের হাতে সরাসরি ভর্তুকি পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্দেশ্যে এক কোটি ৪২ লাখ কৃষকের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী কৃষকদের পরিচয়পত্র তৈরি করা হচ্ছে। পরিচয়পত্র দেখে কৃষকদের হাতে সেচের জন্য ব্যবহূত ভর্তুকির টাকা তুলে দেওয়া হবে।
উত্সাহিত হওয়ার মতো ব্যবস্থাটি এ বছরই চালু হচ্ছে। আগামী বোরো মৌসুমের জন্য এটি একটি বিরাট আশীর্বাদ। কারণ, গত বছর সেচ ও সারের বাড়তি ব্যয় বহন করতে গিয়ে কৃষক সর্বস্বান্ত হয়েছে। এর পরিণামে এবার ধান-চালের উত্পাদন হ্রাসের আশঙ্কার কথা শোনা গিয়েছিল। কিন্তু ভর্তুকির টাকা সরাসরি হাতে পাওয়ার নিশ্চয়তা সৃষ্টির ফলে কৃষিতে সুফল পাওয়া যাবে। কৃষক ফসল উত্পাদনে উত্সাহ নিয়ে এগিয়ে আসবে। সেদিক থেকে উদ্যোগটি সময়োপযোগী।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের এ উদ্যোগ কৃষিতে এক বিপুল সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে। কারণ, পরিচয়পত্রটি তৈরি করা হয়েছে দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। কৃষকদের জন্য একটি স্থায়ী তথ্যভাণ্ডার (ডেটাবেইস) গড়ে তোলা হবে। প্রতিবছর তা হালনাগাদ ও নতুন তথ্য যুক্ত করা হবে। এ তথ্যভাণ্ডার কম্পিউটারে সংরক্ষিত থাকবে। কৃষকদের এ ধরনের পরিচয়পত্রের প্রয়োজনীয়তা সব সময় অনুভূত হয়েছে। কিন্তু আগে এ রকম উদ্যোগ দেখা যায়নি। কোন কৃষক কতটা জমি চাষ করে, তার কত সেচ প্রয়োজন, কোন ধরনের সার কতটা দরকার—এ সবকিছুই পরিচয়পত্র দেখে ও কম্পিউটারে সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি বের করে জানা সম্ভব হবে। এভাবে তার জন্য প্রযোজ্য ভর্তুকির টাকা নির্ধারণ করে তা তাকে বুঝিয়ে দেওয়া যাবে।
এ বিশাল কাজটি সম্পন্ন হয়েছে মাঠপর্যায়ে, সরেজমিনে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তৈরি করা ফরম পূরণ করার জন্য গ্রামে গ্রামে কৃষকের ঘরে কর্মীরা গিয়েছেন। এটিই তালিকার সবচেয়ে বড় শক্তি। কারণ, এটি সরাসরি কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতে তৈরি করা। দ্বিতীয়ত, কাজটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর করলেও, তাদের সহযোগী ছিলেন নির্বাচিত স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা সক্রিয় সহায়তা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ডিজেল-ভর্তুকি বিতরণের সময়ও স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের সহায়তা নেওয়া প্রয়োজন। এতে কাজটি সহজে করা যাবে।
শুধু ডিজেল-ভর্তুকি নয়, কৃষিঋণ বিতরণ, ঋণ আদায়, সার বিতরণসহ কৃষি উপকরণ কৃষকের হাতে সময়মতো সরাসরি পৌঁছে দেওয়াসহ অনেক কাজে তথ্যভাণ্ডার ও পরিচয়পত্র ব্যবহার করা সম্ভব। এ ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয় চিন্তাভাবনা করে একটি স্থায়ী ব্যবস্থা দাঁড় করালে নিরীহ কৃষকেরা সরকারি সুবিধা লাভে নানা ধরনের বঞ্চনা ও প্রতারণার হাত থেকে বাঁচবে।

No comments

Powered by Blogger.